- রাবিজীবনী (১-৯)
‘একজন অমৃতপুত্রকে আমরা তখনই আবার সহজভাবে তাঁর মর্ত্য-রূপে ভাবতে পারি, যখন সময়ের ব্যবধানে অনেক অবান্তর সঞ্চয় ক’রে ঝড়ে, আবার সমস্ত তথ্য প্রকাশিত হবারও বাধা থাকে না। রবীন্দ্রনাথকে তাই অপেক্ষা করতে হবে, হয়তো দীর্ঘকাল—অন্তত যতদিন না ‘রবীন্দ্রজীবনী’ পরিবর্ধিত হবার পরেও নতুনতর তথ্য নিয়ে অনুরূপ গ্রন্থ আরও বেরোয়।’—চল্লিশ বছর আগে সেই-যে লিখেছিলেন বুদ্ধদেব বসু, সেই অপেক্ষারই যেন যোগ্য অবসান ঘটালেন প্রশান্তকুমার পাল তাঁর ‘রবিজীবনী’ গ্রন্থে। নতুনতর দৃষ্টিভঙ্গি থেকে, নবতর তথ্যের মিশেল ঘটিয়ে, যুক্তিসিদ্ধভাবে যাবতীয় তথ্যকে যাচাই করে, একটির-পর-একটি খণ্ডে তিনি তুলে ধরে চলেছেন এ-যাবৎ অনাবিষ্কৃত এক মর্ত্য-রূপী রবীন্দ্রনাথকে। উচ্ছ্বাসের বাষ্পে অস্পষ্ট নয় সেই মূর্তি, কবিকৃত ভাষ্যে খণ্ডিত নয় তার স্বরূপ। কবিকেও যে জীবনচরিতে খুঁজে পাওয়া সম্ভব, সে-কথা জানাতেই প্রশান্তকুমার পালের ‘রবিজীবনী’। ‘রবিজীবনী’র এই চতুর্থ খণ্ডের কালসীমায় রয়েছে ১৩০১ থেকে ১৩০৭ (১৮৯৪-১৯০১) পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও কর্মজীবনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ। এর সূচনায় পরিণত যৌবনের বিচিত্র সৃষ্টিশীলতা, পরিণতিতে আসন্ন প্রৌঢ়ত্বের প্রশান্তি। ‘সাধনা’ থেকে ‘ভারতী’ হয়ে ‘বঙ্গদর্শন’-এর প্রস্তুতি-পর্ব। সাধনায় যে-প্রতিভা সমকালীন সামাজিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনকে তীক্ষ্মভাবে বিশ্লেষণ করেছে, ভারতীতে সেই প্রতিভা ইতিহাসের আদর্শ নির্ধারণে ব্রতী। এ যেন বঙ্গদর্শনে অতীত ইতিহাসের পটভূমিকায় সমকালীন সমাজ ও রাজনীতিকে প্রতিস্থাপনের ভূমিকা। বহু অচিহ্নিত রবীন্দ্রনাথকে যুক্তি-তর্ক দিয়ে চিহ্নিত করে, সমকালীন সৃষ্টিকে বিশ্লেষণ করে এই ভূমিকাটিকে স্পষ্ট করে। তুলেছেন প্রশান্তকুমার। এই পর্বটিকে সঠিকভাবে বুঝে নিতে পারলে তবেই পরবর্তীকালের আদর্শবাদী, ভবিষ্যতের দিশারী রবীন্দ্রনাথকে বুঝে নেওয়া সম্ভব। এই খন্ড শেষ হয়েছে ঊনবিংশ শতাব্দীর সমাপ্তিতে ও বিংশ শতাব্দীর সূচনায়। উনিশ শতকের বহু বদ্ধমূল বিশ্বাসের ভিত কীভাবে শতাব্দীর শেষ পর্বে টলে গিয়েছে—রবীন্দ্রনাথের ভাবজীবনের বিকাশের মধ্য দিয়ে বিশ্ব-ইতিহাসের এই বিবর্তনের চেহারাটিও এই গ্রন্থে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
Reviews
There are no reviews yet.